এবার সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজের অস্থায়ী অধ্যাপকদের, স্থায়ীকরণেও ব্যপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। অভিযোগ, UGC, CSC-র নিয়মা মেনে কোনোরকম যোগ্যতার পরীক্ষা না দিয়েও চাকরি পাচ্ছেন SACT-রা। কলেজে পড়ানোর ন্যূনতম যোগ্যতা NET, SET, Ph.D তো দূরের কথা এম.এ. তে ৫৫% নম্বর নেই কয়েক হাজার SACT-এর। গবেষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের এক বড় অংশ এর বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদও দেখাচ্ছ রাজ্যে।
১৯ আগস্ট, ২০১৯ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়ার এক প্রশাসনিক সভায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি এবং সরকারি রাজ্যের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজগুলিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ অস্বচ্ছভাবে যেসকল অস্থায়ী অধ্যাপক (GL/PTT/CWTT) নিয়োগ করেছিল তাদের এক ছাতার তলায় এনে SACT বা State Aided College Teacher নাম দিয়ে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের চাকরি সুনিশ্চিত করার কথা ঘোষণা করেন। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার মাত্র এক মাস আগে ১৩/০৭/১৯ উচ্চ শিক্ষা দপ্তর ওইসকল অস্থায়ী অধ্যাপকদের নিয়োগ যে UGC এবং রাজ্যের CSC-র নিয়ম, নীতিকে সঠিকভাবে মেনে করা হয়নি এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি (Order No. 1081 / EH/O/CS/4A-44/2019) প্রকাশ করেছিল। যাদের নিয়োগ নিয়ে খোদ সরকার উষ্মা প্রকাশ করেছিল, তবে কেন তাদের কলেজের চাকরি ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত সুনিশ্চিত করে মর্যাদা বৃদ্ধি করল সরকার? স্বভাবত এমন অসংখ্য প্রশ্ন বিভিন্ন মহল থেকে উঠতে শুরু করেছে।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ২৩/১২/২০১৯ তারিখে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা দপ্তর SACT-দের জন্য যে বিজ্ঞপ্তি (No.2018 –Edn (CS)/ 10M-83/2019) প্রকাশ করে তাতে SACT-দের দুটি ক্যাটাগরিতে আনা হয়। ক্যাটাগরি-১, যাদের UGC ও CSC-র নিয়ম মতে কলেজে পড়ানোর যোগ্যতা রয়েছে। ক্যাটাগরি-২, যাদের UGC ও CSC-র নিয়ম অনুযায়ী কলেজে পড়ানোর কোনোই যোগ্যতা নেই এবং এদের সংখ্যাই অধিক। কিন্তু কোন যোগ্যতা থাকলে তাকে SACT ক্যাটাগরি-২ তে নেওয়া হচ্ছে সেটাও সরকার স্পষ্ট করেনি। ফলে এ নিয়ে রয়েছে বিরাট প্রশ্ন চিহ্ন। পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে প্রায় ৩০,০০০ প্রার্থী রয়েছে যাদের UGC–র নিয়ম মতে কলেজে পড়ানোর যাবতীয় যোগ্যতা– NET, SET, Ph.D রয়েছে। অথচ তাদেরকেও কেন SACT পদে যোগ্যতা পরীক্ষার সুযোগটুকুও দিল না রাজ্য সরকার? এর থেকেই সরকারের অভিসন্ধি আঁচ করতে পারছেন অনেকেই।

এই অবস্থায় রাজ্যে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষকরা বলছেন, শিক্ষার মতো পবিত্র ক্ষেত্রে ঘৃণ্য রাজনীতির প্রবেশ ঘটেছিল বাম আমলেই। দলের লোকদের বিভিন্ন উচ্চ পদে বসানো থেকে শুরু করে, সহজে চাকরি পাই-এ দেওয়ার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। ২০১০ সালে কলেজে অস্থায়ী অধ্যাপকদের অধিকাংশের যোগ্যতা না থাকলেও ৬০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী করে দিয়েও ২০১১ শেষ রক্ষা হয়নি বামফ্রন্টের। তৃণমূল সরকারের আমলে দলের লোক ও অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিষয়টি মাত্রা ছাড়িয়েছে।
তাঁরা আরও প্রশ্ন তুলেছেন, UGC, CSC-র নিয়মা মেনে কোনোরকম যোগ্যতার পরীক্ষা না দিয়েও চাকরি পাচ্ছেন SACT-রা। কলেজে পড়ানোর ন্যূনতম যোগ্যতা NET, SET, Ph.D তো দূরের কথা এম.এ. তে ৫৫% নম্বর নেই কয়েক হাজার SACT-এর। তাহলে প্রশ্ন এই SACT-রা ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত কলেজে পড়ালে উচ্চ-শিক্ষার মান কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে? গবেষণা কিংবা উচ্চশিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রী পরবর্তীতে আসতে উৎসাহ পাবে কিনা তা নিয়ে বিশেষভাবে আশঙ্কিত শিক্ষিত মহলও। প্রায় ১৪,০০০ SACT দিয়ে কলেজের পঠন-পাঠনের কাজ যদি চলে যায়, SACT-রা ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা করে ক্লাস নেয় তাহলে পরবর্তী বছরগুলিতে নতুনরা কলেজের চাকরি পাবে কী করে?

SACT ঘোষণার পরের দিন থেকেই সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী, গবেষকেরা লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, UGC-কে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তারা SACT প্রত্যাহার কিংবা সকলকে যোগ্যতা পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। কোনো সদুত্তর না পেয়ে USRESA নামক এক সংগঠন কলকাতা হাইকোর্টে কেসও রুজ্জু করে। USRESA’র অভিযোগ মহামান্য বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে কোর্টে এপিডেপিড জমা দিতে বলেন। অথচ কোর্টের রায়কে অমান্য করে সরকার এপিডেপিড জমা না দিয়ে SACT নিয়োগের প্রক্রিয়া চালু রাখে। SACT-দের ফাইলে কদিন আগে স্বাক্ষর করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ৩১ জুলাই পর্যন্ত যেখানে রাজ্যের সমস্ত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ সেখানে দু-তিন দিন আগে কলেজগুলোতে পৌঁছে গেছে SACT-দের অ্যাপ্রুভাল লেটার।